মায়ানমারের একটি সামরিক আদালত দেশটির সাবেক নেতা অং সান সুকিকে আরও ৭ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। এই নিয়ে বিভিন্ন মামলায় মোট ৩৩ বছরের সাজা হল গণতন্ত্রপন্থী এই নেত্রীর।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনেকটা আকস্মিকভাবে মায়ানমারের ক্ষমতা দখলের কয়েকদিনের মধ্যেই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দেশটির তৎকালীন নির্বাহী প্রধান অং সান সুকিকে আটক করে সেনাবাহিনী।
এর আগে ও পরে সুকির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এর একাধিক সংসদ সদস্যসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে মায়ানমারের জান্তা সরকার।
এরপর থেকেই অং সান সুকির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে একের পর এক মামলা দিতে থাকে সামরিক সরকার। তার বিরুদ্ধে মোট ১৯টি অভিযোগ আনা হয় সরকারের পক্ষ থেকে।
এগুলোর মধ্যে শেষ পাঁচটির রায় দেওয়া হয় শুক্রবার। অন্যগুলোর বিচার আগেই শেষ হয়েছে।
সর্বশেষ আনা আভিযোগে অং সান সুকিকে অনিয়মের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। অভিযগে বলা হয়, ক্ষমতাসীন থাকার সময় সুকির মন্ত্রীসভার একজন সদস্য একটি হেলিকপ্টার ভাড়া করেছিলেন। কিন্তু তার জন্য সেসব নিয়মনীতি অনুসরণ করার কথা, সরকারপ্রধান হিসেবে সুকি তা যথাযথভাবে করেননি।
অং সান সুকির বিরুদ্ধে আনা এর আগের অভিযোগগুলোর কোনোটিতে কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা, কোনোটিতে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি আমদানি করা, আবার কোনোটিতে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ভঙ্গের দায়ে তাকে কারাদন্ড দেয়া হয়।
সুকি ও তার দল তার বিরুদ্ধে আনা এই সকল অভিযোগ প্রত্যাখান করে এগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদীত হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও শুরু থেকেই এসব মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে।
সুকির এই বিতর্কিত বিচার প্রক্রিয়াগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে রুদ্ধদার আদালতে। সেখানে সাধারণ মানুষ কিংবা সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশ সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি সুকির আইনজীবীদের গণমাধ্যমের সাথে কথা বলার ব্যাপারেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
৭৭ বছর বয়সী নোবেল শান্তি পুরষ্কারে ভূষিত অং সান সুকি তার জীবনের বেশির ভাগটাই কাটিয়েছেন মায়ানমারে নিজ বাড়িতে গৃহবন্দী অবস্থায়।
গতবছর ক্ষমতা দখলের পর সারাদেশ থেকে প্রায় ১৭,০০০ নাগরিককে আটক করে মায়ানমারের জান্তা সরকার। এদের মধ্যে ১৩,০০০ এখনও দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনের পাশাপাশি মায়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তে জাতিগত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথেও ক্রমাগত সংঘর্ষ চলছে দেশটির সেনাবাহিনীর। গণতন্ত্রপন্থীরা ছাড়াও এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো জান্তা সরকারের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২,৬০০ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মায়ানমারে সহিংসতা বন্ধ এবং অবিলম্বে সুকিসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, চীন ও রাশিয়া এই প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকলেও অতীতের মত ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে এটিকে বাধাগ্রস্থও করেনি।