সাবেক মাওবাদী গেরিলা নেতা পুষ্প কমল দহল আবারও বসতে চলেছেন হিমালয়কন্যা নেপালের প্রধানমন্ত্রীর আসনে। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মত দেশটির শাসনভার পেতে যাচ্ছেন ডাকনাম ‘প্রচন্ড’ দিয়েই বেশি পরিচিত এই নেতা।
চলতি মাসে অনুষ্ঠিত নেপালের সাধারণ নির্বাচনে কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়। ফলে জোট সরকার গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
এই প্রক্রিয়াতেই প্রধান বিরোধী দল কমিউনিস্ট পার্টি হাত মেলায় প্রচন্ডের মাওয়িস্ট সেন্টারের সাথে, যেটি নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ আসনে জয় পেয়েছিল।
নতুন জোটের ক্ষমতা বন্টনের চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মাওয়িস্ট সেন্টারের নেতা প্রচন্ড। এরপর তিনি সরে দাড়াবেন। তার স্থলাভিষিক্ত হবেন কমিউনিস্ট পার্টির কোনো নেতা।
প্রচন্ডের মাওয়িস্ট সেন্টার নেপালে এতদিন ক্ষমতাসীন নেপালি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ ছিল। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নেপালি কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। সেই সুযোগে দলটির সাথে আবারও জোট সরকার গঠনের শর্ত হিসেবে প্রচন্ডকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানায় মাওয়িস্ট সেন্টার।
তবে তাদের সেই শর্ত মানতে রাজি হননি ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা ও তার দল নেপালি কংগ্রেস। এর প্রতিক্রিয়ায় জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায় প্রচন্ডের দল।
এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই প্রধান বিরোধীদল কমিউনিস্ট পার্টির সাথে জোটবদ্ধ হওয়া এবং প্রচন্ডকে প্রধানমন্ত্রী করার ব্যাপারে তাদের সমর্থনের কথা জানানো হয় মাওয়িস্ট সেন্টারের পক্ষ থেকে।
দু’সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত নেপালের সংসদ নির্বাচনে মাওয়িস্ট সেন্টার পেয়েছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩২ আসন। প্রধান বিরোধীদল কমিউনিস্ট পার্টি পায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৮ আসন।
২৭৫ আসনের সংসদে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১৩৮ সাংসদের সমর্থন। কমিউনিস্ট পার্টি ও মাওয়িস্ট সেন্টারের মোট আসন এর চেয়ে কম হলেও কয়েকটি ছোট দল ও স্বতন্ত্র সাংসদদের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়তে সমস্যা হবেনা প্রচন্ডের নেতৃত্বাধীন নতুন এই জোটের।
নেপালের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্রও জানিয়েছেন, নবগঠিত সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সমর্থনের প্রেক্ষিতে পুষ্প কমল দহল প্রচন্ডকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি।
এতদিন ক্ষমতায় থাকা নেপালি কংগ্রেস এবারের নির্বাচনে একক সর্বোচ্চ ৮৯ আসনে জয়ী হলেও অন্য কোনো দলের প্রয়োজনীয় সমর্থন না পাওয়ায় সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসতে হবে তাদের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার পাটিগণিতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় নিজের প্রধানমন্ত্রীত্ব আদায় করে নিতে পারলেও সামনের দিনগুলোতে সরকার পরিচালনা করা সহজ হবেনা প্রচন্ডের জন্য।
জোট শরিকদের নানাবিধ চাপ ছাড়াও ৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়া, আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়া, চীন-ভারতের টানাটানির মধ্যে ভারসাম্য রাখার মত জটিল সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে তাকে।
২০০৮ সালে প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো রাজতন্ত্রের অবসানের পর অস্থির রাজনীতির দেশটিতে এপর্যন্ত মোট ১০ টি সরকার প্রত্যক্ষ করেছে নেপাল, যার কোনোটিই এখনও পর্যন্ত সুস্থিতি দিতে পারেনি হিমালয়কন্যাকে।