ওয়াশিংটন সফরে গিয়ে আজ মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকি। এই সফরের মধ্য দিয়ে চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এবারই প্রথম ইউক্রেনের বাইরে পা রেখেছেন জেলেন্সকি।
আর যুদ্ধকালীন প্রথম বিদেশ সফরের জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকেই, যারা সংঘাত শুরুর পর সামরিক থেকে কূটনৈতিক, সম্ভাব্য সব ধরনের সমর্থন দিয়ে এসেছে ইউক্রেনকে।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের অংশ হিসেবে বুধবার সন্ধ্যায় মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি। দেশটির সরকার, সংসদ ও জনগণের অব্যাহত সমর্থনের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। একই সাথে আরও সাহায্যের প্রত্যাশাও তুলে ধরেন জেলেন্সকি।
রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিরোধে ইউক্রেনের নাগরিকদের বীরত্বের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি এও জানান, রাশিয়ার সেনা ও অস্ত্র সংখ্যার তুলনায় তার বাহিনী পিছিয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক সহায়তা শুধু ইউক্রেনের পাশে থাকার জন্য নয়, বরং যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে হারিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্যও অপরিহার্য।
প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি বলেন, ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে অর্থ ব্যয় করছে, তা কোনো সাহায্য নয়, বরং বিনিয়োগ। ইউক্রেনের মাধ্যমে কার্যত পুরো বিশ্বের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রক্ষায় এই বিনিয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ এরূপ সহায়তার অনুপস্থিতিতে আগ্রাসনই জিতে যাবে এবং তা ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর অন্যান্য আগ্রাসী শক্তিকেও দখলদারিত্ব চালাতে অনুপ্রাণিত করবে।
নিজেদের সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করলেও জেলেন্সকি জানান, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন মাটি কামড়ে পড়ে আছে এবং কোনো অবস্থাতেই আত্মসমর্পণ করবেনা। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর লড়াইয়ের উদাহরণ টেনে বলেন, ১৯৪৪ সালে হিটলারের নাৎসী জার্মানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাহসী সৈনিকেরা যেভাবে লড়েছিল, ইউক্রেনের যোদ্ধারাও এখন ঠিক সেটাই করছে নিজ দেশে।
যুদ্ধের বিভিন্ন ফ্রন্টে তার সফরের কথা স্মরণ করে প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি বলেন, আমি সম্প্রতি দোনবাসের বাখমুতে গিয়েছিলেন। সেখানে জমির প্রতিটি ইঞ্চি যেন রক্তে ভেজা, ঘন্টায় ঘন্টায় আওয়াজ পাওয়া যায় গুলিবর্ষণের। এরপরই জেলেন্সকি যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াইরত ইউক্রেনীয় সেনাদের স্বাক্ষর করা ইউক্রেনের একটি জাতীয় পতাকা মার্কিন কংগ্রেসকে উপহার দেন। তার হাতে থেকে এটি গ্রহণ করেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
এদিনের ভাষণে ভোলোদিমির জেলেন্সকি স্পষ্টভাবে নাম উল্লেখ করে ইরানের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ইরানের তৈরি শত শত বিধ্বংসী ড্রোন ইউক্রেনের অবকাঠামোর জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ-ইরানের এই সহযোগিতাকে জেলেন্সকি অভীহিত করেন ‘এক সন্ত্রাসীর আরেক সন্ত্রাসীকে’ খুঁজে পাওয়া হিসেবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, আমরা যদি এখনই এদের থামাতে না পারি তবে এরা এরপরে আমাদের অন্য মিত্রদের ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়বে।