আকস্মিক যুক্তরাষ্ট্র সফরের অংশ হিসেবে আজ হোয়াইট হাউজে যান ভোলোদিমির জেলেন্সকি। সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হোয়াইট হাউজে দুই শীর্ষনেতা চলমান ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। এরপর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন বাইডেন ও জেলেন্সকি।
হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন বাইডেন বলেন, ইউক্রেন নিয়ে তার এবং প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকির দৃষ্টিভঙ্গি অভিন্ন। তারা দু’জনেই চান একটি মুক্ত, স্বাধীন, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইউক্রেন।
জেলেন্সকির সাহসের প্রশংসা করে জো বাইডেন মন্তব্য করেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের নেতৃত্ব সারাবিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, রাশিয়ার ‘স্বৈরতান্ত্রিক লোভ’ আর আগ্রাসনের সামনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ভোলোদিমির জেলেন্সকি। বাইডেন জানিয়ে দেন, স্বার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখন্ডতা রক্ষায় ইউক্রেনের পাশে সর্বদা থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক চালানো রাশিয়ার একের পর এক হামলার কথা উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেন, বছরের সবচেয়ে শীতল ও অন্ধকার দিনগুলোতে ইউক্রেনের সাধারণ জনগণকে নিদারুণ কষ্ট দিতেই এমনটা করছে মস্কো। এর মাধ্যমে রাশিয়া শীতকালকেও যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন বাইডেন।
রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে বাইডেন ও জেলেন্সকি একসুরে সমালোচনা করলেও মস্কোর সাথে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য বোঝা যায় দু’নেতার অবস্থানে।
সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন যুদ্ধ থামিয়ে ‘শুধুই শান্তি’ চাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এর সূত্র ধরে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুধুই শান্তির’ অর্থ যদি হয় আমার দেশের স্বার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভৌগোলিক অখন্ডতার সাথে আপোস করা এবং এতদিন ধরে রাশিয়ার চালানো ‘অমানবিক’ কর্মকান্ডকে মনে না রাখা, তাহলে সেটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আজ দুপুর ২টা নাগাদ হোয়াইট হাউজের দক্ষিণ লনে পৌছান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকি। তার পরনে ছিল সবুজ সামরিক স্যুট, যেমনটা ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জেলেন্সকি নিয়মিত পরে আসছেন। হোয়াইট হাউজের আঙিনায় তার গাড়ি পৌছানো মাত্রই মার্কিন সেনাদের একটি দল তাকে সামরিক অভিবাদন জানায়।
হোয়াইট হাউজের অভ্যন্তরে দু’নেতার বৈঠকের সময় প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে একটি সামরিক মেডেল স্মারক হিসেবে উপহার দেন। জেলেন্সকি জানান, যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শনের সময় একজন ইউক্রেনীয় যোদ্ধা তাকে এটি দিয়ে বলেছিল, খুব সাহসী কোনো প্রেসিডেন্টকে এটা দেবেন।
মেডেলটি হাতে নিয়ে আবেগতাড়িত হন জো বাইডেনও। উপহার গ্রহণ করে তিনি জেলেন্সকির কাছে জানতে চান, যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ঐ সৈনিকটির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব কিনা!
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওয়াশিংটন সফরটি নিরাপত্তার কারণে শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল। নিজ দেশের রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রথমে ট্রেনযোগে প্রতিবেশী পোল্যান্ডে যান জেলেন্সকি। সেখান থেকে একটি মার্কিন সামরিক বিমানে করে ওয়াশিংটনের উপকন্ঠের বিমানঘাঁটিতে পৌছান তিনি। এরপর সড়কপথে ওয়াশিংটনে আসেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট।
এক সপ্তাহ আগে চূড়ান্ত হওয়া প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকির যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে রাশিয়া তাতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি তা বানচালের জন্য খারাপ কিছুও ঘটিয়ে বসতে পারে, এই আশংকায় দূ’দেশের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও সফরটির ব্যাপারে সরাসরি কিছু জানানো হয়নি। এমনকি কিয়েভের মার্কিন দূতাবাসেরও বেশিরভাগ কর্তাব্যক্তি জেলেন্সকি যুক্তরাষ্ট্রে পৌছানোর আগ পর্যন্ত এব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন।