আর্জেন্টিনার একটি আদালত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্ডেজ ডে কির্চনারকে দূর্নীতির দায়ে ছয় বছরের কারাদন্ড দিয়েছে।
৬৯ বছরের কির্চনারের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে নিজের এক বন্ধুকে সরকারি কাজ পাইয়ে দেবার অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিচারে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কারাদন্ডের এই আদেশ দেয় আর্জেন্টিনার নিম্ন আদালত।
তবে কারাদন্ডের রায় এলেও ভাইস-প্রেসিডেন্ট কির্চনারকে এখনই জেলজীবন ভোগ করতে হবেনা। কারণ সাবেক প্রেসিডেন্ট, বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট, সংসদের উচ্চকক্ষের বর্তমান স্পিকারসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার সুবাদে আইনত বিশেষ দায়মুক্তি পাওয়ার সুযোগ তার রয়েছে।
এছাড়া আজকের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কির্চনার। সেই আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ। ততদিন পর্যন্তও কারাবাস এড়ানোর সুযোগ পাবেন তিনি।
আজকের রায়ে শাস্তির পাশাপাশি তার আর কখনো রাষ্ট্রীয় কোনো পদে আসীন হওয়ার সুযোগও আজীবনের জন্য কেড়ে নিয়েছে আদালত।
অর্থাৎ বাকি জীবন কির্চনার রাজনীতি করতে পারলেও কোনো রাষ্ট্রীয় পদের জন্য কখনো নির্বাচন করতে পারবেননা কিংবা মনোনীতও হতে পারবেননা বলে আদেশ দিয়েছে আদালত।
অবশ্য এ মামলায় আপিল করলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শাস্তির আদেশের মত এই নির্দেশনাও অকার্যকর থাকবে। অর্থাৎ দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে যেমন তিনি বহাল থাকতে পারবেন, একইভাবে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ যেকোনো নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন ক্রিস্টিনা কির্চনার।
দূর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্রিস্টিনা ফার্নান্ডেজ ডে কির্চনার তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদীত হিসেবে অভীহিত করেছেন। তিনি নিজেকে ‘বিচারিক মাফিয়াতন্ত্রের’ শিকার বলেও মন্তব্য করেন।
আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে আর্জেন্টিনার ইতিহাসে প্রথম কোন ভাইস-প্রেসিডেন্ট স্বপদে বহাল থাকা অবস্থায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেন।
ক্রিস্টিনা কির্চনারের বিরুদ্ধে আনা এই মামলার অভিযোগটি সংঘটিত হয়েছিল তিনি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কির্চনার দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অভিযোগে বলা হয়, সেসময় প্রেসিডেন্ট কির্চনার বড় অংকের একটি সরকারি কাজ ঘুষ নিয়ে, আইনকে পাশ কাটিয়ে খুব দ্রুততার সাথে নিজের ব্যবসায়ী বন্ধু লাজারো বায়েজকে পাইয়ে দেন।
আজকের রায়ে বায়েজকেও ছয় বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত বছর মানি-লন্ডারিংয়ের আরেক মামলায় বায়েজকে বারো বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল আদালত।
কির্চনার ও বায়েজ ছাড়াও আজকের মামলাটিতে আরও এগারো জন অভিযুক্তের বিচার করা হয়। এদের মধ্যে সাতজন দোষী সাব্যস্ত হন। তাদেরকে সাড়ে তিন থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
সরকারি কৌশুলিরা জানিয়েছেন, ক্রিস্টিনা কির্চনার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে আর্জেন্টিনার দক্ষিণাঞ্চলীয় সান্তা ক্রুজ প্রদেশে কয়েক ডজন সরকারি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছেন তারা। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ কখনো শেষও হয়নি। অর্থাৎ এই প্রকল্পগুলোকে সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিপুল পরিমান অর্থ সেসময় তুলে নেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সান্তা ক্রুজ প্রদেশটি ক্রিস্টিনা কির্চনারের প্রধান রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
আর্জেন্টিনার বহুল আলোচিত এই মামলাটি দেশটিকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত করে দিয়েছে। কির্চনারের সমর্থকদের কাছে তিনি ভীষণভাবে জনপ্রিয়। তারা রাজধানী বুয়েনেস আয়ার্সে কির্চনারের আবাসের সামনে নিয়মিত জড়ো হয়ে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েআসেছেন।
অন্যদিকে ক্রিস্টিনা কির্চনারের বিরোধীরা আদালতের রায়ের পর তাকে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে তার কঠোর সমালোচনা করছেন এবং নৈতিক দায় নিয়ে ভাইস-প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন।