সাম্প্রতিক সময়ে আকাশ সীমান্ত অতিক্রমের সবচেয়ে বড় ঘটনায় তাইওয়ান অভিমুখে ৮৭ টি যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে চীন।
ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্রটির আকাশ ও সমুদ্রসীমায় চীনা যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ ঢুকে পড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিত্তনৈমিত্যিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। তবে একসাথে এতগুলো যুদ্ধযানের এভাবে দেশটির অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ার ঘটনা নিকট অতীতে বিরল।
তাইওয়ান নিজেদেরকে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করলেও চীন একে নিজেদেরই বিদ্রোহী প্রদেশ হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। দীর্ঘদিন নিজস্ব নির্বাচন, সংসদ, সরকার ও শাসন ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়ে আসলেও চীন মৌখিক ও কূটনৈতিক বিরোধিতা ছাড়া দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ অতীতে নেয়নি।
তবে শি জিনপিং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ‘এমনকি প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে হলেও’ তাইওয়ানকে চীনা শাসনের অধীনে নিয়ে আসার হুমকি দিয়ে আসছে বেইজিং। এরই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক বছরে তাইওয়ানের চারিদিকে সামরিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে চীন।
আজকের ঘটনায় ৪২ টি জে-১০, জে-১১, জে-১৬ ও সু-৩০ যুদ্ধবিমান, দু’টো নজরদারি বিমান, একটি অগ্রিম সতর্কতা জারি বিমান এবং দু’টো সামরিক ড্রোন চীন ও তাইওয়ানকে বিভক্ত করা সীমানা পেরিয়ে যায়।
আরও বেশ কিছু বিমান আকাশ সীমান্তের এপারে সক্রিয় ছিল। সব মিলিয়ে চীনা সামরিক বাহিনীর ৭১টি বিমান আজকের তৎপরতায় অংশ নেয়।
তাইওয়ান জানিয়েছে, চীনের এই বিমান মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় তারা তাদের নজরদারি বিমান, জাহাজ এবং স্থলভাগে মোতায়েন মিসাইল ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে।
তাইওয়ান প্রণালিকে ঘিরে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে চলতি বছর দেশটিতে মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরকে কেন্দ্র করে। বেশ কয়েকজন মার্কিন সাংসদ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে তাইওয়ানে পেলোসির কয়েক ঘন্টার সফরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের উত্তেজনা তীব্র হয়।
ঐ ঘটনার পর থেকে তাইওয়ানের জলসীমা ও আকাশসীমায় চিনা যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমানের অনুপ্রবেশের ঘটনা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যায়।
চলতি সপ্তাহেই চীনা সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তারা তাইওয়ানকে ঘিরে বিশেষ মহড়া পরিচালনা করতে যাচ্ছে। তারা জানায়, তাইওয়ান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘উস্কানির’ প্রতিক্রিয়ায় তারা এই সামরিক মহড়া করতে যাচ্ছেন।
গত সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নে সহায়তা সংক্রান্ত একটি বিলে স্বাক্ষর করেন। এই আধুনিকায়নের ফলে চীনের সামরিক হামলা মোকাবেলায় তাইওয়ানের সামর্থ্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
এর আগে নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তিন ঘন্টার বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, চীন সামরিক অভিযান চালিয়ে তাইওয়ান দখল করে নেবে, এখনই এমন কোন সম্ভাবনা তিনি দেখছেননা।
এদিকে গত শুক্রবার চীন আরও একটি সামরিক মহড়া চালিয়েছিল জাপান সীমান্তের ওকিনাওয়া দ্বীপের কাছে। এই দ্বীপটি নিয়ে চীন ও জাপানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। উভয় দেশই দ্বীপটিকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।
জাপানের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবারের মহড়ায় চীনের বিমানবাহী রণতরী লিয়াওনিং ও কয়েকটি ছোট যুদ্ধজাহাজ অংশ নেয়। জাপানি নৌবাহিনী এসময় মহড়ার তথ্য সংগ্রহের জন্য ঐ অঞ্চলে দু’টো পর্যবেক্ষক জাহাজ পাঠায়।