মায়ানমারের সেনা নিয়ন্ত্রিত আদালত গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুকিকে আর ৩ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে চলা এই মামলাটি সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে করা হয়েছিল।
এই নিয়ে একাধিক মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ২০ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন অং সান সুকি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগে মোট ১১টি মামলা দায়ের করেছিল দেশটির ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তা সরকার। সবক’টিতে দোষী সাব্যস্থ হলে সুকির কারাদন্ডের মেয়াদ প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত হতে পারে!
সুকি তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগই অস্বীকার করে আসছেন। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এসব মামলাকে ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে অভীহিত করে আসছে।
আজকের রায় হওয়া মামলাটি ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দায়ের করেছিল জান্তা সরকার। ঐ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় অং সান সুকির দল ‘ন্যাশনাল লীগ দর ডেমোক্রেসি’ (এনএলডি)।
তবে ফলাফল মানতে অস্বীকার করে মায়ানমারের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী। তারা নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ তোলে। এই নিয়ে কয়েক মাসের রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর গত বছর অনেকটা আকস্মিকভাবে মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় সেনাবাহিনী।
সংসদ বিলুপ্ত করে, সংবিধান স্থগিত করে দেশব্যাপী সামরিক শাসন জারি করা হয়। একে একে আটক করা হয় বিলুপ্ত সংসদের সদস্যসহ এলএলডি-র শীর্ষনেতাদের। একসময় গেফতার করা হয় অং সান সুকিকেও। যিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই হয় জেলে, নয় নিজে বাড়িতে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটিয়েছেন।
এরপরই ৭৭ বছর বয়সী শান্তিতে নোবেলজয়ী এই নেত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিতে শুরু করে সামরিক জান্তা সরকার। কোনোটা দুর্নীতির, কোনোটা নিরাপত্তা ভঙ্গের, আবার কোনোটা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে।
মায়ানমারের ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ের নজিরবিহীন গণবিক্ষোভ শুরু হয় দেশটিতে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নানা বয়সী মানুষ সামরিক শাসকদের বিদায় এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে পথে নেমে আসে।
শুরুতে নমনীয় থাকলেও কয়েক সপ্তাহ পরই আন্দোলন দমনে নামে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী। তাদের কঠোর অবস্থানের মুখে আর বেশিদিন টিকতে পারেনি গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ।
বিভিন্ন সূত্রের দাবি, সেসময় থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির প্রায় ১৫,০০০ নাগরিককে আটক করেছে মায়ানমার সরকার। এদের মধ্যে ১২,০০০ এখনও দেশটির বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহল অবিলম্বে আটককৃতদের মুক্তি, সেনা শাসন প্রত্যাহার এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।
জাতিসংঘেও এ সংক্রান্ত একাধিক প্রস্তাব উত্থাপিত হলেও প্রায় প্রতিবারই মায়ানমারের জান্তা সরকারের পক্ষে চীন অবস্থান নেওয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।