মালেয়শিয়ার সাধারণ নির্বাচনে কোন দলই নিরঙকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দেশটি প্রথমবারের মত ঝুলন্ত সংসদের অভিজ্ঞতা পেতে যাচ্ছে।
গতকাল অনুষ্ঠিত দেশটির সংসদ নির্বাচনের এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপানের নেতৃত্বাধীন জোট সবচেয়ে বেশি ৮৩ টি আসনে জয়লাভ করেছে। তবে ২২২ আসনের সংসদে ক্ষমতায় যেতে প্রয়োজনীয় ১১২ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বেশ দূরে আছে তারা। ফলে এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবেনা জোটটি।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দল পারিকাতান ন্যাশনালের জোট। তারা পেয়েছে ৭৩ আসন।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের দল বারিসান ন্যশনালের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে এবারের নির্বাচনে। ১৭৮ টি আসনে প্রার্থী দিয়ে জোটটি মাত্র ৩০ টি আসনে জয়লাভ করতে পেরেছে।
তবে সব ছাপিয়ে মালেয়শিয়ার এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে আলোচিত ফলাফল হিসেবে উঠে এসেছে মাহাথির মোহাম্মদের বিষ্ময়কর পরাজয়।
একসময় একটানা কয়েক মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে মালেয়শিয়াকে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মাহাথির। এর সাথে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মিশেলে প্রায় কয়েক দশক দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিক হিসেবে গণ্য হয়ে এসেছেন তিনি। ভোটবাক্সেও দেখিয়েছেন ক্যারিশমা। ৫৩ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এর আগে কোন নির্বাচনেই পরাজয়ের মুখ দেখেননি মাহাথির মোহাম্মদ।
তবে এবার ধরাশায়ী হলেন। তাও খুব বাজেভাবে। ৯৭ বছর বয়সে নিজ আসনে শুধু পরাজিতই হলেননা, হলেন চতুর্থ, হারালেন জামানতও। জামানত হারিয়েছেন তার নতুন দলের অন্য সব প্রার্থীও।
কোন দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া দল ও জোটগুলো এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে জোট সরকার গঠন করার চেষ্টা করবে।
সেই চেষ্টা সফল হলে তাদের মনোনীত কোন নেতাকেই মালেয়শিয়ার পরবর্তী সরকার গড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন দেশটির রাজা আবদুল্লাহ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ মালেয়শিয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। ২০১৮ সালের সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত তিনজন প্রধানমন্ত্রী সরকার পরিচালনা করেছেন দেশটিতে।এই অল্প সময়ে নানা ইস্যুতে একের পর এক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দেখেছে মালেয়শিয়া।
এবারের নির্বাচনে ঝুলন্ত সংসদের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ভবিষ্যৎেও রাজনৈতিক সংকট অব্যাহত থাকার আশংকা থেকেই যাচ্ছে।