মালেয়শিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আনোয়ার ইব্রাহিম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশটির সংসদে নির্বাচনে কোন দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলেও সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পায় আনোয়ার ইব্রাহিমের দল ‘পাকাতান হারাপান’।
সরকার গঠনের জন্য ২২২ আসনের মালয় সংসদে অন্তত ১১২ আসনের দখল থাকতে হয় কোন দল বা জোটের। এবারের নির্বাচনে কোন দলই সেই সংখ্যক আসনে জয়লাভ না করায় অন্যান্যদলের সাথে মিলে সরকার গঠন করতে হবে আনোয়ার ইব্রাহিমকে।
এব্যাপারে কয়েকটি দলের সাথে আলোচনা হলেও তা এখনও পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানা গেছে। তা স্বত্তেও আনোয়ার ইব্রাহিমকে সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান দেশটির রাজা আবদুল্লাহ।
ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভাব্য রাজনৈতিক অচলাবস্থা এড়াতেই আনোয়ার ইব্রাহিমকে আগেভাগেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশটির রাজা। সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিনেও মতানৈক্যে পৌছাতে না পারলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে পারত দেশটিতে।
তা এড়াতেই সম্ভবত নির্বাচনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসনে জেতা দলের নেতা হিসেবে আনোয়ার ইব্রাহিমকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলেন রাজা। এখন প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম অন্যান্য দলের সাথে আলোচনা করে সংসদে তার সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায়ের উদ্যোগ নেবেন।
আজ দুপুরে মালেয়শিয়ার রাজপ্রাসাদ ইস্তানা নেগারায় দেশের ১০ম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ার ইব্রাহিমকে শপথ পড়ান রাজা আবদুল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের প্রকৃতি কেমন হতে যাচ্ছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। এটি কয়েকটি দলের অংশগ্রহণে জোট সরকার হতে পারে, আবার হতে পারে শুধুই পাকাতান হারাপানের সরকার, যেটায় অন্য দলগুলো বাইরে থেকে শুধু সমর্থন দেবে, আবার হতে পারে প্রধান সবক’টি দলের অংশগ্রহণে গঠিত একটি জাতীয় সরকার।
মালেয়শিয়ার এবারের সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দেশটির একসময়ের প্রবল প্রতাপশালী নেতা মাহাথির মোহাম্মদের ভরাডুবি। নিজ আসনে তিনি শুধু পরাজিতই হননি, জামানত হারিয়ে হয়েছেন চতুর্থ। একই পরিণতি তার দল থেকে দাঁড়ানো বাকি প্রার্থীদেরও।
নিজের কয়েক দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কখনো, কোন নির্বাচনেই পরাজিত হননি মাহাথির মোহাম্মদ। শেষ পর্যন্ত ৯৭ বছর বয়সে এবং সম্ভবত জীবনের শেষ নির্বাচনেই পরাজয়ের সেই স্বাদ নিতে হল একসময়ে মালেয়শিয়ার অর্থনীতি বদলে দেওয়া এই নেতাকে।
উল্লেখ্য, মালেয়শিয়ার নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ২৫ বছর আগে এই মাহাথির মোহাম্মদেরই যোগ্য প্রতিদ্বন্দী এবং সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে দেখা হত। তবে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার অধরাই থেকে গিয়েছিল আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য।
কয়েক বছর আগে মালেয়শিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ওঠা ব্যাপক আর্থিক দূর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাছাকাছি আসেন একসময়ের প্রতিদ্বন্দী দুই নেতা মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিম।
এর ধারাবাহিকতায় জোটবদ্ধ হয় তাদের দুই দল এবং পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায়ও আসে সেই জোট। সেসময় ক্ষমতা ভাগাভাগির সমঝোতায় সিদ্ধান্ত হয়, শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হবেন মাহাথির, কয়েক বছর পর সে পদে বসবেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
তবে ক্ষমতায় গিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি মাহাথির মোহাম্মদ। নির্দিষ্টের সময়ের পরও আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা ছাড়তে অসম্মতি জানান তিনি। ফলশ্রুতিতে ভেঙে যায় জোট। আরও একবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন আনোয়ার ইব্রাহিম।
তবে এবার একেবারে নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রধান দাবিদার হয়ে ওঠেন ইব্রাহিম। সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে তাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন মালয় রাজা। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ আড়াই দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথমবারের মত প্রধানমন্ত্রীত্ব পেলেন ৭৫ বছর বয়সী আনোয়ার ইব্রাহিম।